তিস্তা এবং তিস্তা পাঁড়ের কাঁন্না পর্বঃ২
লিখেছেন লিখেছেন shaidur rahman siddik ২৩ এপ্রিল, ২০১৪, ০৭:৪৩:০২ সন্ধ্যা
তিস্তা মরলেও কাঁন্না..মারলেও
কাঁন্না...পর্বঃ২
..পাশের গ্রামের অনেক পাড়া পড়শী ছিলো যাদের ছিলো গোঁলা ভরা ধান,গোয়াল ভরা গরু-ছাঁগল হাঁস মুরগি।জমি ভিটা আবাদি জমি,কলা বাগাঁন,সুপারির বাগান,সবজ্বির জমি। তাদের ছিলোনা কোন কষ্ট কোন দূঃখ, তবে....মনের মাঝে ছিলো একটি ভয় এবং আতংক যে কখন আমাদের কেও ঐ শর্বনাসা তিস্তার কঁবলে পড়তে হয়।
তবে তারা ভালো করেই জেনেই রাখতো যে_আমাদেরকেও ঐ পাড়ার লোকেদের ঘর-বাড়ির মত আমাদেরও একদিন ভিটা-জমিটুকু নদীর গর্বে বিলিন হয়ে যাবে।আমরাও হব ভিটা মাটি ছাড়া এক যাযাবর। যেখানে হয়তো নতুন করে জমি ক্রয় করতে হবে কিংবা নিকটতম আত্নীর কাছ থেকে ছোট একটু জমি নিয়ে ছোট সংসার তৈরী করে থাকবো।
যাদের সন্তান লেখা-পড়া করতো তাদের কষ্টের সিমানা আরো তিব্র,তাদের ছেলেদেরকে লেখাপড়ার খরচ জোগান,জাঁমা কাপড় ইত্যাদি ইত্যাদির চিন্তায় নদীর ধারের বাবা-মায়েরা সব সময়ই দুর্বল।
তাদের ও স্বপ্ন ছিলো আমার ছেলে মেয়েরা একদিন ডাক্তার হবে,ইন্জিনিয়ার হবে,কিংবা হবে কোন বড় মাপের সরকারী চাকুরিজীবি।
স্বপ্ন যেমন ছিলো যেমনি ভাবেই সফল হতে পারতই,কি ছিলোনা বা তাদের।কিন্তু নদীর গর্বে বিলীন হয়ে যাওয়ায় সপ্ন তো দূরের কথা নিজের বাড়ি করার জায়গাটুকু পেলেই বাছি।
আল্লার রহমতও আছে নদীর ধাঁরের পাঁড়ের মানুষগুলির প্রতি।প্রায় প্রতেকটা বাড়ীর ছেলে মেয়ে হয়তো সরকারি চাকুরি করছে,নয়তো বিশাল বড় ব্যবসা,নয়তো বিদেশে কিংবা ভালো রাজনিতিবীদ।
বিএনপির রুহুল কবির রিজভী ভাইয়ের বাড়ী ও একদিন নদীর গর্বে চলে যাবে।
দুঃখ যখন লাগে........,..!!!!
মাঘ এবং ফাল্গুন মাসে যখন নদীর পানি কমতে থাকে তখন ঐ ঘড়-বাড়ী ভাঁঙ্গা কৃষকদের মাঁঝে একটু একটু করে হাঁসি ফুঁটতে থাকে।
তখন সবাই নদীর চড়ের দিকে লক্ষ করে বলতে থাকে ঐটা দেহা যায় ঐটাই আমাদের বাড়ী,আবার আর একজন বলে-না ঐডাই আমার বাড়ী। এমনি এমনি কিছুক্ষন তর্ক ও তাদের মাঁঝের গবেষনা চলতে থাকে।
যখন আর একটু চঁর জাগতে থাকে তখন সবার জমিগুলো আমিন এনে মেপে নেয় কিছু ফসল আবাদ করার জন্য।
সেই হাঁড়ভাঁঙ্গা শীতে কঠোর পরিশ্রম করে ধান বুনিয়ে আসে, প্রতিদিন সকল বিকেল পানি দিয়ে আসে,দেখে এসে কতটুকু বড় হলো।
কদিন পর দেখা যায় ধানের রেঁণু এসেছে সবাই মনে মনে খুবই খুশি।আর কিছু দিন পড়েই ধাঁন পাঁকলেই আমাদের গোঁলা ভরে যাবে।আহা কি আনন্দ!
বৈশাকের শেষ ধাঁন পাকাঁ পাকাঁ...,....দুই একদিনের মধ্যেই ধাঁন কাটার জন্য প্রস্তু্ত।
ঠিক তখনেই শুরু পানি প্রবাহ.......!!!!
সকাল বেলাই দেখে সেই আমাদের সম্বল ধাঁনের জমিটুকু পানিতে তলিয়ে গেছে।
তখন নদীর কিনারায় বসে মনে মনে ভাবতে শুরু করে কিভাবে ধাঁনগুলি কেঁটে আনতে পারবো।
নিরুপায় হয়ে কেউ কেউ নদীতে সাতরিয়ে এসে ডুবদিয়েই অনুশরন করেই কাঁটতে থাকে তার কষ্টের শেষ অবদান টুকু,হয়তো কিছু পেয়ে যায় কিংবা সেখানেই থেকে যায়।তাছাড়া কিছুই করার নেই।
ঐ দিকে আবার শোনা যায় চেঁচামেঁছি কারো ধাঁন তলিয়েছে করো ভূট্টা কারো পিঁয়াজ, করো বা বাদাম সহ তিঁশি,কাঁলাই,নাম না জাঁনা আরো অনেক কিছুই।
তবে ছোট থেকে একটা জিনিস দেখেই এলাম ঐ সব লোকেদের মনে কোন তলিয়ে গেলো যে ফসল টুকু তাতে কোন আফসোস নেই তখন শুধু থাকে চেষ্টা...কেউ ভাটিয়ালি,কেউ ভাওয়াইয়া....ইত্যাদি গান গেয়ে মনের আনন্দে কাজ করতে থাকে.,....(চলবে)
বিষয়: বিবিধ
৯৪০ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন